Editor's Vids

পুরস্কার হলো আরো কাজ করে যাওয়ার প্রেরণা

বাংলাদেশের ন্যাশনাল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট আমিরুল হক আমিন এ বছর নুরেমব্যার্গ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পুরস্কার পেয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে নিজ অর্জন ও আশা-আকাঙ্খার কথা বলেন তিনি৷

 
অডিও শুনুন16:42

এ পুরস্কার তাজরিন, রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকদের প্রতি সম্মান: আমিরুল হক আমিন

জার্মানির নুরেমব্যার্গ শহরের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পুরস্কার এবার এগারো বছরে পড়তে চলেছে৷ পুরস্কারটির মূল্য হলো পনেরো হাজার ইউরো৷ আমিন যে ‘‘বদ্ধপরিকরতা এবং অকুতোভয়ের সঙ্গে'' গার্মেন্ট শিল্পের কর্মীদের জীবনযাত্রা ও কাজের পরিবেশের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করেছেন, তার সশ্রদ্ধ উল্লেখ করেন নুরেমব্যার্গের আন্তর্জাতিক জুরি৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকার সময়েই আমিরুল হক আমিনের যোগাযোগ হয় ঢাকা সিটি টেলারিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সঙ্গে৷
Deutschland Bangladesch Gewerkschaftsführer Amirul Haque Amin bekommt Nürnberger Menschenrechtspreis
ডয়চে ভেলে: পরে যখন এনজিডাব্লিউএফ প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে, তখন কি সেই অভিজ্ঞতা আপনার কাজে লেগেছিল?
আমিরুল হক আমিন: গার্মেন্টসের শ্রমিকরা যেহেতু সব চাইতে অসংগঠিত, কাজেই আমি ঠিক করি আমার ‘টার্গেট এরিয়াটা' এখানেই হবে....ঢাকা মহানগরীর দর্জিদের একটা অংশ কাটিং মাস্টার হয়; যারা সেলাই কলে কাজ করতো, তার বনে যায় মেশিন অপারেটর... আমি ওদের আগের শ্রমিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলাম কিনা...৷
আপনি যখন শ্রমিক সংগঠনের নেতা হিসেবে আপনার কর্মজীবনের কথা ভাবেন, তখন কোন সাফল্যগুলো আপনার মনে পড়ে? ১লা মে-কে বেতনসহ সরকারি ছুটির দিন করা, ঈদের বোনাসের ব্যবস্থা করা, মেটারনিটি লিভ বা মিনিমাম ওয়েজ বোর্ড – অর্জনের তালিকাটা খুব সংক্ষিপ্ত নয়...)
২০০৫ সালে যখন স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ধসে শ্রমিকরা মারা গেল, ঐ সময় থেকে একটা ক্যাম্পেইন শুরু করি যে, এইটা শুধুমাত্র অ্যাক্সিডেন্ট হিসেবে গণ্য করা যাবে না; কারো না কারো অবহেলাজনিত কারণে এই অ্যাক্সিডেন্টগুলো হচ্ছে; সেই অবহেলাটা ‘বায়ার'-দের (বিদেশি ক্রেতাদের), সেই অবহেলা মালিকদের, সেই অবহেলায় হয়ত আমাদের সরকারেরও আংশিক দায়দায়িত্ব আছে৷ অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটছে, কাজেই আইন অনুসারে যে ক্ষতিপূরণ, সেই ক্ষতিপূরণের বাইরে এদের যে ‘লস অফ আর্নিং' (রোজগার কমা অথবা বন্ধ হওয়া), অর্থাৎ বাকি যতোদিন এরা অসুস্থ থাকছে এবং যে পরিমাণ টাকা এরা রোজগার করতে পারত, সেই পরিমাণ টাকাই এদের ক্ষতিপূরণ বলে গণ্য করতে হবে৷....এইটা এখন মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত৷
কিন্তু বাস্তবে সেই নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে কি?
রানা প্লাজায় প্রত্যেক নিহত শ্রমিকের দশ লাখ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আছে৷....আইনে যেখানে দুলাখ টাকা, সেখানে দশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া, তার মানে পাঁচ গুণ বেশি৷....এই আইনি ক্ষতিপূরণ যেটা, সেটা দেওয়ার দায়দায়িত্ব মালিকদের – আর আমরা (শ্রমিক সংগঠন) যেখানে কথাবার্তা বলছি, সেখানে দায়িত্ব শুধু মালিকদের নয়; মালিকদের (দায়িত্ব) আছে, সরকারের (দায়িত্ব) আছে; কিন্তু মেজর (মুখ্য) অংশটা বহন করতে হবে যারা ‘বায়ার' (ক্রেতা), তাদের৷ স্পেকট্রাম, তারপর স্মার্ট ফ্যাশন, রানা প্লাজা, এগুলোতে কিন্তু ক্রেতারাই মূল ক্ষতিপূরণটা দিয়েছে৷
নুরেমব্যার্গ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পুরস্কার পাওয়া সম্পর্কে আপনার কী অনুভূতি?
নুরেমব্যার্গ তো হিউমান রাইটস আপহোল্ড করার (মানবাধিকার রক্ষার) জন্য অবশ্যই একটা সবচেয়ে নামকরা জায়গা৷ নুরেমব্যার্গ ট্রাইব্যুনাল তো পৃথিবী বিখ্যাত৷....আমি মনে করি, (এই পুরস্কার) শুধু আমাকে না, এটা সমগ্র ট্রেড ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক এবং বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনকে রেকগনিশন (স্বীকৃতি)৷....একদিকে যেরকম এটা ট্রেড ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের স্বীকৃতি; আমাদের তাজরিন, রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকদের প্রতি সম্মান; গ্লোবাল ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি সম্মান; আবার অন্যদিকে এই অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে হয়ত যে সমস্ত জায়গায় আমার সীমাবদ্ধতা আছে, ত্রুটি আছে, বিচ্যুতি আছে, সেগুলো হয়ত সংশোধন করে, অতিক্রম করে, আমাকে হয়ত আরো বেশি পরিমাণে শ্রমিকদের প্রতি নিবেদিত হয়ে আমাদের ইনডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের (শিল্পায়নের) প্রতি ‘কমিটমেন্ট বেসড' (উৎসর্গীকৃত প্রাণ হয়ে) কাজ করতে হবে৷
আমিরুল হক আমিন বিগত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে শ্রমিক নেতা হিসেবে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের কর্মীদের উন্নতিসাধনে নিয়ত৷

Related News

No comments:

Leave a Reply