বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের জন্যে ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামোর বিষয়ে শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার পরও সোমবার ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা করার দাবীতে নতুন করে শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে।
ঢাকার কাছে আশুলিয়া ও ফতুল্লায় এই বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, ঐ ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
মালিকদের সাথে সমঝোতাকারী নেতারা অবশ্য বলছেন, শ্রমিকরা নতুন মজুরি কাঠামো মেনে নেওয়ায় আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ছে।
মালিক, শ্রমিক ও সরকারের মধ্যে বৈঠকের পর বলা হয়েছিল, নতুন মজুরি কাঠামোর বিষয়ে তিন পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং শ্রমিকরা আন্দোলন বাদ দিয়ে কাজে যোগ দেবেন।
রবিবার দীর্ঘ সময় ধরে চলা ঐ বৈঠকে ৪২টি শ্রমিক সংগঠন যোগ দেয় এবং এসব সংগঠনের নেতারা নতুন মজুরি কাঠামো মেনে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
এর পরদিনই অবশ্য দুটো বড় শিল্পাঞ্চল - আশুলিয়া এবং ফতুল্লায় কয়েক হাজার শ্রমিক ঘোষিত মজুরি কাঠামোর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান৻
দুই জায়গাতেই শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।
আশুলিয়া এলাকায় এক পর্যায়ে ছুটি ঘোষণা করা হয় কয়েকটি পোশাক কারখানায়।
ফতুল্লার একটি কারখানার শ্রমিক মোহাম্মদ বাবুল বলছিলেন, নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে তাঁরা হতাশ এবং সে কারণেই শ্রমিকরা এখনো বিক্ষোভ করছে।
তিনি বলেন, ‘‘চালের দাম হয়েছে ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা, এক লিটার সয়াবিন তেল ১২০ টাকা আর এক কেজি ডাল এখন ১৩০ টাকা। আগে যে মজুরি পেতাম, তা দিয়ে চলত না। এখন হয়তো মোটামুটি চলবে।‘‘
“কিন্তু এই টাকা দিয়ে আমি আমার বৃদ্ধ বাবা মাকে কিছু দিতে পারব না, বা আমার বাচ্চাকে এক টুকরো আপেল খাওয়াতে পারবো। না“
মালিক ও সরকারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠকে বেশীর ভাগ শ্রমিক সংগঠনই অংশ নিয়েছিল।
তবে ১৩টি শ্রমিক সংগঠনের একটি জোট বলছে যে ঐ সমঝোতা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ পোশাক শ্রমিকদের যারা সত্যিকারভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন, তারা ঐ বৈঠকে অংশ নিতে পারেনি।
ঐসব সংগঠনের একটি, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন ত্রিপক্ষীয় সমঝোতাকে প্রত্যাখান করার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘‘মজুরি কাঠামোতে বৃদ্ধির হার সব গ্রেডে একই রকম হয়নি।‘‘
তিনি বলেন, ‘‘মজুরি কাঠামো কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে আগামী নভেম্বরে। এর আগে সরকার ঘোষণা করেছিল যে ঈদের আগেই বর্ধিত মজুরি দেওয়া হবে, এটা প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন।‘‘
“কিন্তু মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নে মালিকরা যে চার মাসের শর্ত দিয়েছিলেন, সেই শর্ত মেনেই এটা তিন মাস পরে কার্যকরী করার কথা বলা হচ্ছে। এটা দেশের কোন গার্মেন্টস শ্রমিক মেনে নেবে না।“
ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেয়া জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন দাবী করেন, বেশীরভাগ পোশাক শ্রমিক নতুন মজুরি কাঠামো মেনে নিয়েছে।
তিনি অবশ্য এও মনে করেন যে সময়ের সাথে সাথে শ্রমিকদের আন্দোলনের মাত্রা কমে আসবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের একটা ঢেউ তৈরী হয়েছিল এবং সেখান থেকে বিষয়টি স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে অবশ্যই সময় লাগতে পারে।
“আমরা শ্রমিকদের কাছে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। নতুন মজুরি কাঠামো অধিকাংশ শ্রমিকের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার কারণে যে অবস্থা তৈরী হয়েছিল, তার চেয়ে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটেছে।“
আমিরুল হক আমিন মনে করেন, আগামী দুই একদিনের মধ্যেই পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং আন্দোলনরত শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে কারখানায় ফিরে যাবেন।
No comments: