ঢাকা: বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জনাব রাশেদ খান মেনন এমপি আজ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামসহ সকল মৌলবাদী ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কুৎসা ও বিষোদগার করায় হেফাজত নেতা মওলানা আহামদ শফির সমালোচনা করে জনাব মেনন বলেন,“জেএমবি ও আই এস সমর্থকসহ সকল মৌলবাদী ও জঙ্গীদের পরাজিত করতে না পারলে গার্মেন্টস শিল্পের নারী শ্রমিকসহ দেশের নারী সমাজ শিক্ষা, কাজ ও পেশার অধিকার হারাবে। গনতন্ত্র ধ্বংস হবে, জাতীয় উন্নয়ন থেমে যাবে এবং দেশ পিছিয়ে যাবে।”
তিনি আজ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন (NGWF) এর ৩১তম প্রতিষ্ঠা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সভাপতি গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিরুল হক্ আমিন। উল্লেখ্য যে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ১৯৮৪ সালের ২৪শে জুলাই গঠিত হয়।
জনাব মেনন শ্রম দপ্তরের একশ্রেনীর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কর্তৃক গার্মেন্টস সেক্টরের ইউনিয়ন ধ্বংসের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য শ্রম মন্ত্রনালয়ের প্রতি আহবান জানান।
দেশের অগ্রগতি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালনকারী গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবদানের সরকারী স্বীকৃতির দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশের উন্নয়ন ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতি অবহেলা একসাথে চলতে পারেনা। গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবশ্যই ভালো ভাবে চলার মত বেতন দিতে হবে ও তাদের সরকারী উদ্যোগে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।”
১৯৯০ সালে ডিসেম্বর মাসে সারাকা গার্মেন্টস অগ্নিকান্ডে অসংখ্য শ্রমিকের মৃত্যু, ২০০৫ সালে স্পেক্ট্রাম গার্মেন্টস এ ভবন ধ্বসে অগনিত শ্রমিকের জীবনহানী এবং তাজরীন অগ্নিকান্ডে ১১২ জন ও রানা প্লাজা ধ্বসে ১১৩৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু এবং হাজার হাজার শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে জনাব মেনন বলেন, “কারখানার মালিকরা এই সব হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। তাদের অবহেলায় এই জীবনহানীর কারন। অথচ এসব হত্যাকান্ডের জন্য দায়ীদের একজনেরও বিচার ও শাস্তি হয়নি।
তিনি গত দুই বছর ত্রাস অশান্তি ও সন্ত্রাস চালিয়ে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ ও অসংখ্য মানুষের প্রানহানীর জন্য বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর মৃত্যু দন্ড বহাল রাখার পর বিএনপি প্রতিক্রিয়ায় এটা পরিষ্কার হয়েছে যে যুদ্ধাপরাধীদেও রক্ষা করায় খালেদা জিয়ার আন্দোলনের মূল লক্ষ ছিল।”
জনাব মেনন ঈদের আগ থেকে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘটরত সোয়ান গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের সমস্যা অদ্যাবথি সরকারের মাধ্যমে সমাধান না হওয়ায় বিস্বয় প্রকাশ করেন। তিনি নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পাশাপাশি সমাজ বদলের সংগ্রামের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার জন্য গামেন্টস শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তিতায় জনাব আমিরুল হক্ আমিন অবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, সকল কারখানায় নিরাপদ কর্মস্থল, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও নারী শ্রমিকদেও সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার ও কর্মস্থলে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন ও বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি এম দেলোয়ার হোসেন।
এছাড়াও ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মিস্ শাফিয়া পারভীন স্বাগত ভাষন দেন। ইপিজেডের গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবস্থা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নারী সম্পাদক মিসেস জেসমিন আক্তার, ইউনিয়ন সংগঠিত করার সমস্যা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন NGWF সংগঠক মিস আরেফা সুলতানা, কারখানায় রেজিষ্টার্ড ইউনিয়নের সুবিধা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডস ষ্টাইল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিস তাছলিমা আক্তার, রানা প্লাজর শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মিসেস সালমা আক্তার, তাজরীনের শ্রমিকদের পক্ষে মিসেস জরিনা বেগম।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য জনাব কামরুল আহসান, একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জনাব কফিল উদ্দিন, সংহতি গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মিস্ স্মৃতি আক্তার শাহিদা, সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মন্ডল এবং জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মিস নুরুন নাহার, মোঃ ফারুক খান ও সুইটি আক্তার, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মিসেস আরিফা আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক, মোঃ ইলিয়াস, মোঃ ফরিদুল ইসলাম, মিস পারভীন সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন বেসিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ ৬ শতাধিক শ্রমিক।
সভা শেষে মনোজ্ঞ সাঃস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পরে একটি বর্ণ্যাঢ্য র্যালি প্রেসক্লাব থেকে বেরিয়ে হাইকোর্ট মোর, তোপখানা রোড প্রদক্ষিন কওে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শেষ হয়।
No comments: