বাংলাদেশের সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানায় নতুন বর্ধিত হারে মালিকরা বেতন দিতে রাজি হচ্ছে না, এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এ ঘটনায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ এবং কারখানায় ভাংচুরও করেছে। চলতি মাস থেকেই বাংলাদেশের তৈরী পোষাক শিল্পের শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাওয়ার কথা।পুলিশ বলছে, নুতন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন দেওয়া হচ্ছে না এই অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আদমজী ইপিজেড এবং ফতুল্লায় বেশ কয়েকটি তৈরী পোষাক কারখানার শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ আরো বলছে, এসময় শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ভাংচুর চালিয়েছে। এসময় বেশ কয়েকজন শ্রমিক এবং কর্মচারী আহত হয়।
এছাড়াও ঢাকার পাশে সাভারের আশুলিয়া এলাকাতেও সকালে নতুন মজুরির কাঠামো অনুযায়ী বেতনের দাবিতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে দুপুরের পর থেকেই সব এলাকাতেই পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
বাংলাদেশে এ বছর জুন মাসে যে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়, সে অনুযায়ী গার্মেন্টস শ্রমিকরা এ মাস থেকে নতুন বেতন কাঠামোতে বেতন পাওয়ার কথা।
মালিকরা ইচ্ছেমতো শ্রমিকদের গ্রেড ঠিক করে দিচ্ছেন, ফলে অভিজ্ঞ শ্রমিকদের কারও কারও বেতন কমে যাচ্ছে
এডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, শ্রমিক নেতা
ঠিক কী কারণে এ অসন্তোষ, জানতে চাওয়া হলে একজন শ্রমিক বিবিসিকে বলেন, নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী তার ৪২০০ টাকার বেশি বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও তাকে দেওয়া হচ্ছে ৩৮০০ টাকার কিছু বেশী। বেতন দেওয়ার সময় এবিষয়ে কথা তুললে তার সাথে খারাপ ব্যবহারও করা হয়।
এ জন্যই তারা কারখানা থেকে বেরিয়ে এসেছেন বলে ওই শ্রমিকরা জানান। ওই শ্রমিক আরও বলছিলেন তারা কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করবেন।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল এন্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলছিলেন ঘোষিত মজুরি কাঠামোর দুর্বলতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে ও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
মি ইসমাইলের মতে, শ্রমিকদের কাকে কোন গ্রেডে বেতন দেওয়া হবে সেটি মালিক পক্ষ নিজের ইচ্ছামতো ঠিক করায়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ শ্রমিকদের বেতন আগের চাইতে কমে যাচ্ছে।
দেশে এই প্রথম এত বেশি হারে মজুরি বাড়ানো হয়েছে, ফলে এর বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা হতেই পারে
সালাম মুর্শিদী, বিজিএমইএ সভাপতি
তবে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সালাম মুর্শিদী মনে করেন, যেহেতু দেশে নতুন একটি মজুরী কাঠামো বাস্তবায়ন চলছে, এ সময় কিছু সমস্যা থাকতেই পারে।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, বাংলাদেশে তৈরী পোষাক শিল্পখাতে এবারই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বেতন বৃদ্ধি হয়েছে।
মি মুর্শিদী বলেন, যারা এ শিল্পে নতুন শ্রমিক এবারের নুতন মজুরি কাঠামোতে তাদের বেতন বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, আবার দেখা যাচ্ছে এই কাঠামো অনুসারে মধ্যম পর্যায়ের শ্রমিকদের বেতন সেই অনুসারে বৃদ্ধি পায়নি।
তিনি বলেন, এত বড় একটি শিল্পখাতে কিছুটা ভুলবোঝাবুঝি হতেই পারে; তবে তাঁর মতে সেটি আলোচনা করে সমাধান করাই সবচেয়ে ভালো।
এদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, মজুরি কাঠামোর এসব সমস্যা অনেক আগে থেকেই তারা মালিক পক্ষের গোচরে আনতে চেষ্টা করেছেন এবং তাতে কাজ না হওয়ায় এখন খুব দ্রুত তারা বিষয়টি সরকারের নজরে আনবেন।
No comments: